টেকসই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহঃ
রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর সহযোগিতায় উপজেলা হতে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি অফিসে ই-নথি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে, রেলভবন, ঢাকায় ই-নথি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ কার্যক্রম বাংলাদেশ রেলওয়ের সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ের সকল অফিসে পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের রেলভবনে ই-নথি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ই-নথির কার্যক্রম চালুর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। একটি আধুনিক, দক্ষ এবং সেবামূলক জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনয়নের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং স্বল্প সময়ে সেবা প্রদানই ই-নথি বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য।
রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে ক্রয় কার্যক্রম (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ই-জিপি সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দোশিকা, ২০১৬’ অনুযায়ী নাগরিকগণের সাথে সরাসরি ও উন্মুক্ত যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি Facebook Page এবং Bangladesh Railway fan page চালু রয়েছে এবং নিয়মিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি হালনাগাদ করা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৯৯২ সালে নরওয়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায় এক প্রকল্পের মাধ্যমে দেশব্যাপী এর নিজস্ব ২ ও ৪ কোরবিশিষ্ট Optical fiber ভিত্তিক সমন্বিত ডিজিটাল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। রেলওয়ের নিজস্ব পরিবহন পরিচালনা ছাড়াও উক্ত অপটিক্যাল ফাইবারের অতিরিক্ত সুপ্তধারণ ক্ষমতা ১৯৯৭ সালে গ্রামীণফোন লিমিটেডকে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে লীজ (Lease) দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ হতে ২০১০ সালের মধ্যে উক্ত ২/৪ কোরবিশিষ্ট অপটিক্যাল ফাইবার সেকশন ভেদে ৩২ কোর ও ৪৮ কোরবিশিষ্ট অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয় । বর্তমানে ২৬২২.৬৮ কি.মি অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপিত আছে। এছাড়াও সম্প্রতি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৮৩ কি:মি: সেকেন্ডারী লাইনে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হচ্ছে । রেলওয়ের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপটিক্যাল ফাইবার (Dark fiber) উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরগনের নিকট লীজ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) হতে ২০/১১/২০১৪ সালে NTTN লাইসেন্স প্রাপ্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ রেলওয়ের অপটিক্যাল ফাইবার ভিত্তিক বানিজ্যিক ব্যবস্থা চালু করা হয়। উক্ত Leasing এর ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করে আসছে এবং একই সাথে জাতীয় পর্যায়ে টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও স্বল্পমূল্যে সরকারের কাংখিত টেলিযোগাযোগ সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে আসছে।
সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন পরিচালনার স্বার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল সিগন্যালিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ১১২টি স্টেশনে Computer Based Interlocking (CBI) System চালু করা হয়েছে এবং যার মধ্যে আরও ২৩ টি স্টেশনCTC (Centralized Train Control) System – এর আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ৫৭টি স্টেশনে CBI ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে এবং ঐ স্টেশনগুলো CTC এর আওতায় আনা হবে। এতে ট্রেন চলাচলের নিরাপত্তা ও সময়ানুবর্তিতা যেমন অধিকতর নিশ্চিত হবে; তেমনি সেকশনাল ক্যাপাসিটিও যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে।
রেলওয়েতে ২০১৪ সালে GPS/GPRS based Train Tracking & Monitoring System চালু করা হয় । SunCrops Ltd. নামক প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহায়তায় এই সিস্টেম স্থাপন করা হয়। এই সার্ভিসের আওতায় সম্মানিত যাত্রীসাধারণ ১৬৩১৮ নম্বরেমোবাইল SMS পাঠিয়ে ফিরতি SMS এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের যাত্রা অভিমুখ (Direction), ট্রেনটি ছাড়ার সময়, ট্রেনের অবস্থান, পরবর্তী Stoppage, Delay time সংক্রান্ত তথ্যাদি Real time ভিত্তেতে জানতে পারছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম ৬টি রেলওয়ে স্টেশন ঢাকা, ঢাকা বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা এবং রাজশাহী। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যাত্রী এ স্টেশনগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন গন্তব্য স্থলে যাতায়াত করে থাকেন। ট্রেন চলাচল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য যেমন ট্রেন ছাড়া ও পৌঁছার সময়, গন্তব্য স্টেশন, প্লাটফরম নম্বর, ট্রেনের বিলম্ব ইত্যাদি তথ্য Display Monitor এর মাধ্যমে যাত্রী সাধারণের জন্য সহজলভ্য করার উদ্দেশ্য ARTS BD Ltd. নামক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ঢাকা, ঢাকা বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা এবং রাজশাহী স্টেশনে Computerized Train Information Display System(TIDS) স্থাপন ও চালু করা হয়। সিস্টেমটিকে যাত্রী সাধারণের নিকট আরো অধিক আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে LCD Monitor এর পরিবর্তে LED Monitor দ্বারা Live Transmission এর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এতে যাত্রী সাধারণ মনিটর স্ক্রীনে ট্রেনের তথ্য সমেত উপস্থাপকের ছবিও দেখতে পারেন।
১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে কম্পিউটারাইজড সিট রিজার্ভেশন এবং টিকিটিং সিস্টেম প্রবর্তন করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের ৭৮ টি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশনে সেবাটি চালু রয়েছে। এ সেবাটির মাধ্যমে যাত্রী সাধারণ অতি দ্রুততম সময়ে তাদের কাঙ্খিত গন্তব্যের টিকিট ক্রয় করতে পারছেন। একই সাথে বর্তমানে ৭৮ টি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশনে হতে আন্তঃনগর ট্রেনের অনলাইনে (ইন্টারনেটের মাধ্যমে) টিকিট ক্রয় করতে পারছেন। অনলাইন সেবার কার্যক্রম ২৯/০৫/২০১২ তারিখ থেকে চালু করা হয়েছে। এ সেবা চালু হওয়ার ফলে রেলভ্রমণেচ্ছু যাত্রী সাধারণ স্টেশনে আসার জন্য রাস্তায় যানজটে সময়ের অপচয়, টিকিটের জন্য দীর্ঘলাইনে অপেক্ষার বিরক্তিকর পরিবেশ হতে মুক্তি পেয়েছেন
রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্বশেষ সংযোজন “Rail Sheba” মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট ক্রয় । এই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট ক্রয়ের পাশাপাশি টিকেটের প্রাপ্যতা, অভিযোগ দাখিল ও ট্রেন সম্পর্কিত তথ্যাদি সহজে জানা যায় ।